আমার কলেজবেলা
বসন্তের শেষের দিকে আমার জীবনের প্রথম বোর্ড পরীক্ষার ফলাফল
দিল। আশানুরূপ ফল না করলেও ভালই করলাম। আমি ফলাফলে খুশিই ছিলাম। তবে মা-বাবা কষ্ট
পেল। বাবা তখন বিশেষ মিশনে সিলেট, সেখানে আবার বিদ্যুৎ ছিলনা। তাই তার মনের অবস্থা
বুঝতে পারলাম না।
একে তো বাবা ছিলনা তার উপর কুমিল্লায় নতুন। তাই কোন কলেজে
ভর্তি হব বুজতই পারছিলাম না। তাও দুটা ফরম যোগাড় করলাম। অবশেষে দুটা কলেজই ঠিকলাম।
ইস্পাহানী পাবলিক স্কুল ও কলেজে ইংরেজি ভার্সন, আর ক্যান্টনমেন্ট কলেজ, কুমিল্লা
তে। যেহেতু বাঙালি তাই ক্যান্টনমেন্ট কলেজ,কুমিল্লা তে ভর্তির সিধান্ত নিলাম। এরই
মধ্যেই আবার কুমিল্লা পলিটেকনিকে পরীক্ষা দিয়ে টিকলাম। আমার ইচ্ছা ছিলনা, বাবা
আমার ইচ্ছাটার প্রতি সম্মান দেখিয়ে কলেজে ভর্তি করে দিল।
কলেজে যার সাথে আমার প্রথম পরিচয় হয় সে ছিল রবিউল।ফরম নেবার
সময় আর ভর্তি হবার সময় দেখা হয়েছিল।
কলেজের প্রথম দিন। ২-৩ টা ক্লাস শেষ হয়ে আসল কোন স্যার আসল
না। হটাত ঢাকার বন্ধুদের মধ্যে একজন ফোন দিল। আমি কথা বলছি , এমন সময় লালচে রঙের
শার্ট , চশমা পরে একটু বাকা হয়ে হটতে হাটতে স্যার ডুকলো। ডুকেই তিনি বললেন, “ এই
ছেলে দাড়াও, ক্লাসে মোবাইলে কথা বলছ?” তারপরে আরো অনেক কিছু......।। কলেজ জীবনটা
শুরুই হল স্যারের বকা দিয়ে। আর আমদের সেকশনের ক্লাসটা শুরু হয়েছিলো আমাকে বকা
দিয়ে।স্যারটা ছিলেন আমাদের জীব বিজ্ঞানের শিক্ষক ওসমান গনি স্যার।
কলেজটার বিশেষত্ব ছিল অনেক।
কলেজের সবার মধ্যে প্রচুর আন্তরিকতা ছিল। সবাই জানি কেমন।
আলাদা, একদম আপন জন। একবার কলেজের সিঁড়িতে পা পিছলে জানালার কাছ ভেঙে হাতে পাঁচটা
সিলাই দিতে হয়েছিলো। সে সময় বন্ধুরা আমাকে অনেক সাহায্য করেছিলো।বিশেষ করে ইমরান আর
রাহাত। বাকি কারো নাম বলছিনা ,কারন পড়ে কারো নাম বাদ পড়লে রাগ করবে। মেয়ে বন্ধু
গুলো মাঝে মধ্যে নাস্তা নিয়ে আসতো। বিশেষ করে আমার প্রাক্টিকাল করে দিত। ধন্যবাদ
স্বাতী আমার জীব বিজ্ঞানের সব চিত্র একে
দিবার জন্য। তারানা আমার জীব বিজ্ঞান খাতা লিখে দিয়েছিলি। শিউলি ম্যথ লিখে
দিয়েছিল। তুলি, ইশরা, নাজনিন সহ আর তিন চারজনে মিলে আমার রাষায়ন খাতা লিখে
দিয়েছিলি। তবে রিমা তুই একটু হেল্প করলে অনেক কিছুই হত।
পরিক্ষার হলে সব
থেকে সমস্যা ছিলো দুটা জিনিস। ১। তুলি, ২। লাইবেরিয়ান। তুলির কারনে
লাইবেরিয়ান সব সময় আমার যে রুমে সিট পড়ত সে রুমে আসত। আর তুলির সিট ছিল আমার পিছনে,
তাই স্যার তুলিকে বিশেষ গার্ড দিত। তাই কারো থেকে কোন কিছু দেখে লিখাটা অসম্ভব
ছিল।
লাইবেরিয়ান আমকে খারাপ নজরে দেখত, কারন আমি কলেজে সব সময়
দেরী করে আসতাম আর রাস্তায় স্যরের সাথে দেখা হত।
কলেজটা ছিল প্রত্ন তাত্ত্বিক নিদর্শনের মাঝে। কলেজের সামনে
ছিল ভোজ বিহার, পিছনে রূপবান মূড়া, ডানে লতিকোট মূড়া, বামে ইটাখোলা মূড়া। সামান্য
দুরেই ছিল শালবন বিহার। কেউ যদি কুমিল্লা শালবন বিহারে আসে তবে আমার কলেজ তাকে
অবশ্যই দেখতেই হবে। তবে আমরা যারা কলেজে ছিলাম তেমন একটা যাওয়া হত না।
আমার কলেজের আরেক নাম ছিলো TC COLLEGE & Guardian College. কলেজে পরীক্ষায় ফেল করলেই টিসি , ৭০%
উপস্থিত না হলেই টিসি। সামান্য কিছু হলেই টিসি। আমরা কলেজে ভর্তি হয়ে ছিলাম ১৫০
জন। কিন্তু টিসি পেতে পেতে অবশেষে HSC দিলাম প্রায় ৫০ জনের
মত। আর পান থেকে চুন কষলেয় Guardian.
কলেজে যতটা পড়া লিখা হত তার থেকে বেশি ছিল নিয়ম মানা।
মোবাইল আনা যাবেনা, ছুল কাটো, সাদা জুতা কোথায় আরো অনেক কিছু। স্যাররা অনেক মোবাইল ধরলেও
আমার মোবাইলটা কোনদিন নিয়ে রাখতে পারলো না।
কলেজের প্রায় অনুষ্ঠানেই বক্তৃতা দিতাম। একবার আন্ত কলেজ
বিতর্ক করলাম। আর একবার আন্ত হাউজ বিতর্কে চ্যাম্পিয়ান হলাম। এসব কাজে রাহাত অবশ্য
অনেক সাহস দিয়েছে।
স্যারদের মধ্যে আমার সব থেকে প্রিয় ছিলো গনি স্যার। সব থেকে
অপ্রিয় স্যার ও ছিলো।
বন্ধুদের সাথে গল্প গুলো অনেক মিস করি। সোদিয়া হোটেলের সেই
এক কাপ চা মিস করি। কপি হাউসের গ্রিল মিস করি। বন্ধুদের সাথে এক সাথে বাসে করে
আসাটা মিস করি।
আরো অনেক ঘটনা মিস করসি বলতে সেই ঘটনা গুলোকেও মিস করছি
খুব।
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন